আড়াই থেকে তিন ঘন্টা চান্দের গাড়িতে করে সাজেক পৌছাবার পর যখন সবাই রিসোর্টে ঢুকে আরাম করতেসে, কেউ কেউ আবার রিসোর্টের দোলনায় ঝুলতে ঝুলতে ছবি তুলছে। তখন আমি বের হলাম আমাদের রিসোর্টের রেস্টুরেন্টের খোঁজে। রিসোর্টের ম্যানেজার সোহেল ভাই বললো- আমাদের সাজেক ক্ল্যাসিক প্রিমিয়াম রিসোর্টের পাশেই রেস্টুরেন্ট, আর্মি পোস্ট হতে সামনে।
ম্যাপে দেখলাম যে এখান থেকে কাছেই, হেটে যেতে তিন কিলোমিটারের মত হবে। আমি বেরিয়ে পড়লাম রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে, পিছনে দেখি উৎস ডাক দিলো সেও যাবে আমার সাথে।
একসাথে আমরা হাটা দিয়ে চলতে থাকলাম, প্রথমে এক কিলোমিটার, তারপর দেখলাম হেলিপ্যাড দুইটা। তার পরেই দেখি আর্মি পোস্ট। ভাবলাম- যাক এসেই পড়লাম, ম্যাপেও দেখায় মাত্র ১-১.৫ কিলোমিটারের মত। হেলিপ্যাড পাড় হবার পর পাকা রাস্তা শেষ- এবার মাটির আধা ভাঙা রাস্তা ধরেই আমরা চলতে থাকলাম, কথা বলতে বলতে। আর নিজেরা ভুল করে ফেললাম নাকি কোথাও সে বিষয়ে চিন্তা করতে করতে।
একসময় আমাদের রাস্তা শেষ হলো- তাকিয়ে দেখলাম একটা পাহাড় দাড়িয়ে আছে সামনে। বুঝতে বাকি রইলো না যে আমরা বোকচোদের মত ৩ কিলোমিটার হেটে হেটে কংলাক পাহাড়ের সামনে এসে পৌছে গেসি 😑 পাহাড়ের নিচে রাখা চান্দের গাড়ির স্ট্যান্ডে খেয়াল করলাম- মাকসুদকে। মাকসুদ হলো আমাদের চান্দের গাড়ির ড্রাইভার শরীফ ভাইয়ের সাগরেদ- সাজেকের ভাষায় যাদের “লাইনম্যান” নামে ডাকা হয়।
ইতোমধ্যে শরীফ ভাইয়ের সাথেও দেখা হলো। উনি জিজ্ঞেস করলেন এখানে আমরা কী করতে আসছি আর কিভাবেই বা আসলাম। উনাকে আমাদের কান্ড কারখানা বলার পর উনি হেসে হেসে আমাদের বললেন যে, উনিও এখানে এক কাজে এসেছেন লোকজনের সাথে দেখা করতে। কাজ শেষ হলেই আমাদেরকে গাড়িতে করে রিসোর্টে নামিয়ে দিবেন।
পরে আমাদেরকে উনি এক দোকানে ইন্ডিয়ান গুড়া দুধের স্পেশাল চা খাওয়ালেন। তার আগে আমি আর উৎস এক বোতল করে এনার্জি ড্রিংক্স খেয়ে আমাদের সুগার ফিলাপ করলাম। চা খাওয়ার পর উনার সাথে ভালোই গল্প হল।
উনি গত ১৯ বছর যাবত ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছেন। চান্দের গাড়ি থেকে শুরু করে বাস-ট্রাক পর্যন্ত সব চালিয়েছেন। এমনকি উনার টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ট্রাক চালাবার অভিজ্ঞতাও তিনি বর্ণনা করলেন। এবং সেই রুটে কোথায় কোথায় রেস্ট নিতে হয়, সেটার গল্পও করলেন।
আমাদের খোশগল্প শেষে আমরা চান্দের গাড়ির ছাদে উঠলাম এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার জন্য। আঁকাবাকা- মাটির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রোলার কোস্টারের যে অনুভূতি পেয়েছিলাম, তা বলার মত নয়। ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা আমাদের রিসোর্টের সামনে হাজির।
এসে দেখি রিসোর্ট ফাকা- কোথাও কেও নেই